ইংরেজ-আমেরিকানদের মত উচ্চারণে ইংরেজি বলা সম্ভব, নাকি সম্ভব নয়?
7 March
2019, 2:27pm
-------------------------
শিরোনামে উত্থাপিত
প্রশ্নটির আগে আরেকটা প্রশ্ন মনে জাগে-
ইংরেজ-আমেরিকানদের
মত উচ্চারণে আমাদের মত অইংরেজদের কথা বলা/শেখার প্রয়োজন আছে কিনা?
এ বিষয়ে এই ভিডিও
লেকচারটা দেখা যেতে পারে - https://youtu.be/nt4jTQ7enRA
এছাড়া আরো কিছু
বিষয় এ বিষয়ে বলা দরকার। ইনশাআল্লাহ অন্য কোনো পোস্টে বলবো। আজকে আমরা শিরোনামের প্রশ্ন
নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ।
---
সংক্ষিপ্ত উত্তর:
১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০% সম্ভব।
-
বিস্তারিত উত্তর:
পরের অনু্চ্ছেদগুলো অখন্ড মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
-
আমরা বাঙালি আর
ওনারা ইংরেজ-আমেরিকান; উভয়ই মানুষ। শুধু মানুষই নই আমাদের উভয়ের শরীরে সম সংখ্যক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
বিদ্যমান। এমনকি আমরা যেসব বাগযন্ত্র ব্যবহার করে বাংলা বলি ঠিক একই বাগযন্ত্র ব্যবহার
করে ইংরেজরা ইংরেজি বলে থাকে। তাহলে বোঝা গেল মানুষ হিসেবে কোন কিছুই আমাদের মধ্যে
কম-বেশ নেই। সবার সব কিছুই আছে।
-
এখন প্রশ্ন হলো,
তাহলে আমরা কেন ইংরেজি বললে ইংরেজদের মত শোনায় না? কিংবা আমরা যে ইংরেজি বই পুস্তকে
পড়েছি সেই ইংরেজি-ই ইংরেজ আমেরিকানদের মুখে শুনলে বুঝতে পারি না কেন?
-
ঠিক এখানটায়ই
মাতৃভাষা যে আল্লাহর অশেষ রহমত সেটা অনুধাবন করা যায়। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। জন্মের
পর থেকে এই ভাষাটা প্রাকৃতিকভাবে অল্প অল্প করে আমাদের রক্তে, মননে, মস্তিষ্কে, চিন্তনে
মিশতে থাকে। এমন ভাবে মেশে যে, কোন প্রক্রিয়ায় আমরা ভাষা চিন্তা করি, কোন প্রক্রিয়ায়
শব্দ এবং শব্দের উচ্চারণ মাথায় আসে, কোন প্রক্রিয়ায় শব্দগুলো পরস্পরের সাথে মিলে একটি
পূর্ণঅঙ্গ বাক্যে পরিণত হয়ে মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে এসব না জেনেই আমরা গলগল
করে মনে যা আসে তাই বলতে পারি। এভাবেই আমরা আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রাকৃতিকভাবে মাতৃভাষা
বলে থাকি।
-
কিন্তু গোল বাধে
তখনই যখন আমরা পরিণত বয়সে এসে বিদেশি ভাষা ইংরেজি শেখা শুরু করি। বাংলা ও ইংরেজি দু’টি
ভিন্ন ভাষা। ভিন্ন তাদের বর্ণের উচ্চারণস্থান, ভিন্ন তাদের শব্দের একসেন্ট(accent),
ভিন্ন তাদের বাক্য কাঠামো ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। বাংলা ‘ফ’ এবং ইংরেজি
‘F’ এর উচ্চারণ স্থান কিন্তু এক নয়। বাংলা ‘ফ’ উচ্চারণ করা হয় দুই ঠোঁট কাছাকাছি এনে কিছু বাতাস বের করে দিয়ে।
আর ইংরেজি ‘F’ এর উচ্চারণ অনেকটা আরবী ‘ফা’ এর মত। নিচের ঠোঁট এর সাথে উপরের পাটির
দাঁত লাগিয়ে একটু শো শো আওয়াজ বের করে দিয়ে ‘এফ/ফা’ উচ্চারণ করা হয়। এভাবে ‘V’ এবং
‘ভ’ এর উচ্চারণ এক নয়। এমনি করে বাংলা ও ইংরেজি বর্ণের উচ্চারণ স্থানসহ অন্যান্য টেকনিকল
দিক গুলো অনেকাংশে ভিন্ন। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হওয়াতে স্বাভাবিকভাবে তা আমাদের রক্তে
মিশে গেছে যা একটু আগেই বলা হয়েছে। যখন একজন বাঙালি বিদেশি ভাষা ইংরেজি উচ্চারণ করবে
তখন স্বভাবতই সে তার বাংলা ভাষার উচ্চারণ স্থান থেকে বাংলা স্টাইলে ইংরেজি বলবে। ফলে
তার ইংরেজি কথা ইংরেজদের মত হবে না। এবং ইংরেজরা যখন ইংরেজি বলবে তখন সে একই কারণে
বুঝতেও পারবে না।
-
এখন প্রশ্ন হলো,
তাহলে কি বাঙালিরা (বা অন্যান্য অ-ইংরেজ) ইংরেজ-আমেরিকানদের উচ্চারণে ইংরেজি বলতে পারবে
না? এখানে একটা বিষয় বলা প্রয়োজন – আমি ইংরেজ-আমেরিকান উচ্চারণ বলতে উচ্চারণের সামগ্রিক
দিক এর কথাই বলছি। অর্থাৎ word accent/stress, sentence stress, assimilation,
elision, intonation সহ আরো অন্যান্য সব দিক এর কথাই বলছি।
-
আমরা আগেই জেনেছি
পৃথিবীর তাবৎ মানুষ একই বাগযন্ত্র ব্যবহার করে ভাষা বলে থাকে। যদি তাই হয় তবে ইংরেজরা
যেভাবে ইংরেজি বলে ঠিক সেভাবে বাঙালি এবং অন্যান্য অইংরেজরা বলতে পারবে না কেন? বাগযন্ত্র
তো একই। তাহলে পারবে না কেন? পারতে হলে তাকে কী করতে হবে? এর উত্তরে যাওয়ার আগে আরেকটা
বিষয় তুলে ধরতে চাচ্ছি। আমাদের বাঙালি আলেম সমাজ কি সহীহ শুদ্ধ আরবী উচ্চারণে কোরআন
শরীফ পড়তে পারেন না? শুধু যে পারেন তাই নয়। অধুনা কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বড় বড় প্রতিযোগীতায়
কোরআন তেলোয়াত এ তাঁরা প্রথম স্থান অধিকার করছেন। একজন বাঙালি তার বাঙালি বাগযন্ত্র
ব্যবহার করে আরবদের মাতৃভাষা আরবী কে সহীহ উচ্চারণে তেলোয়াত করছেন। শুধু তেলোয়াতই করছেন
না পুরস্কারও অর্জন করছেন। এটা কী করে সম্ভব? উত্তরটা আরো পরে আসছে।
-
বাঙালি যদি বাঙালি
বাগযন্ত্র ব্যবহার করে একেবারে আরবদের মাতৃভাষা আরবী উচ্চারণ করতে পারে তাহলে কেন ইংরেজ-আমেরিকানদের
মাতৃভাষা ইংরেজি উচ্চারণ করতে পারবে না?
-
আমি এই ফেইসবুকেই
অন্তত দুই জনের নাম বলতে পারবো যারা অত্যন্ত সুন্দর ও সঠিকভাবে আমেরিকান উচ্চারণে ইংরেজি
বলতে পারে। এদের মধ্যে একজন তো আমেরিকানদের মত নাকী স্বরও আনতে পারে। উনি ছোট বেলা
থেকে কার্টুন দেখে ইংরেজি শিখেছেন। অন্যজন বড় হয়ে শিখেছেন। ছোট বেলা থেকে শিখে থাকলে
তো সে পারবেই। সেটাতে বোধ করি কারো আপত্তি নেই। কিন্তু আমি বলছি যেকোন বয়সেই শিখতে
পারবে যদি তিনি ইচ্ছা করেন। ব্যক্তিভেদে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সেটা ব্যক্তির
ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা। কিন্তু আমার বক্তব্য হলো – অবশ্য অবশ্যই সম্ভব।
-
এক্ষণে আমাদের
জিজ্ঞাসা হলো- কিভাবে সম্ভব?
-
উত্তরটা খুবই
সহজ। বাগযন্ত্রকে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিলেই সম্ভব। আমার এক ছাত্রীর গাড়ি দুর্ঘটনায় ডান
হাত অকেজো হয়ে যায়। পরবর্তীতে সে বাম হাতে লিখতে শেখে। ডান হাতে সে যে কাজটা করতো সে
কাজটা বাধ্য হয়ে বাম হাতকে প্রশিক্ষণ দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। এ ধরণের ঘটনা আমাদের আশেপাশে
অহরহ দেখতে পাওয়া যায়। ঠিক একই কাজ করতে হবে আমাদের বাগযন্ত্রকে নিয়ে। বাগযন্ত্রকে
প্রশিক্ষণ দিয়ে নিতে হবে যে, F/V কে বাংলা
‘ফ/ভ’ এর মত উচ্চারণ করবা না। নিচের ঠোঁট এর সাথে উপরের দাঁত লাগিয়ে উচ্চারণ করার প্রশিক্ষণ
দেয়াতে হবে। আলেমরা যদি আরবী ‘ফা’ উচ্চারণ করতে পারে তবে আমরা কেন ইংরেজি F উচ্চারণ
করতে পারবো না? এমনি করে উচ্চারণের অন্যান্য প্রতিটা দিক বাগযন্ত্রকে প্রশিক্ষণ দেয়া
অসম্ভব কিছু নয়। এটা এমন কোনো আহামরি কাজ নয় যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে করা যাবে না।
-
তবে হঁ্যা, ব্যক্তির
মেধাগত সক্ষমতা ও মন-মানসিকতার তারতম্যের কারণে কেউ ১০% পারবে, আবার কেউ ১০০% পারবে।
এই ধরণের তারতম্য অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মত উচ্চারণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোনো কোনো
ছাত্র গণিতে তুখোড়। আবার কারো কারো গণিত মাথায়ই ঢোকে না। কেউ কেউ বিজ্ঞান ছাড়া কিছু
বোঝে না। কারো কারো আবার বিজ্ঞান এর নাম শুনলেই অজ্ঞান হয়ে যায়। সত্যি বলতে এসবই ঘটে
মূলত মেধার গুণগত বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের জন্য। সাথে থাকে মন-মানসিকতার তারতম্য। বেশিরভাগ
মানুষের মেধাই typed মানে সহজ বাংলায় কঠিন পাথরের মত। একবার কোনো কিছু মুখস্ত করে ফেললে
সেখান থেকে আর বের হতে পারে না। নতুন কিছু গ্রহণ করতে ও শিখতে পারে না। আবার কিছু কিছু
মেধা আছে কাদামাটির মত নরম। যেভাবে খুশি আকার দেয়া যায়। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের
থাকে। আর থাকে অল্প কিছু প্রতিভাবান মানুষদের। এরা জীবনের যেকোনো পর্যায়ে, যেকোন বয়সে
যেকোন কিছু শিখতে পারে, যেকোনো কিছু গ্রহণ ও বর্জন করতে পারে। এদের মেধা নদীর মত বহমান;
কোনো কিছু আটকে থাকে না। ওদিকে পলি(অভিজ্ঞতার নির্যাস) কিন্তু ঠিকই জমতে থাকে। যাই
হোক, মূল কথা হলো – ইংরেজ-আমেরিকান দের উচ্চারণে ইংরেজি বলা/শেখা যেকোনো বয়সেই সম্ভব।
যদিও শেখার হার ব্যক্তিভেদে তারতম্য হতে পারে।
-
যদি কোনো ব্যক্তি
একশভাগ সঠিক উচ্চারণ নাও করতে পারে তবুও তার উচ্চারণের প্রতিটা দিক সম্পর্কে সম্যক
ধারণা থাকা উচিত। কারণ একজন অ-ইংরেজ যেমন খুশি তেমন ভাবে ইংরেজি বললেও ইংরেজরা সেটা
বুঝতে পারবে। কিন্তু একজন ইংরেজ-আমেরিকান তার মাতৃভাষা প্রাকৃতিক উচ্চারণেই বলবে। তখন
তো তার কথা ঐ অ-ইংরেজকে বুঝতে হবে এবং যথাযথ সাড়া প্রদান করতে হবে, তাই না?
--
আর হঁ্যা, ইংরেজ-আমেরিকান
দের উচ্চারণ কোত্থেকে শিখবেন এ বিষয়ে আমি অনেক অনেক মন্তব্য ও পোস্ট করেছি Learn
English with Experts গ্রুপে। আর কিছু পোস্ট পেতে পারেন BDLance E-English (নিচে লিংক)গ্রুপে।
এছাড়াও আমার অফলাইনের স্পোকন ইংরেজির ক্লাশ শেয়ার করেছি নিচের গ্রুপে। এছাড়াও বর্তমানে
একটা অনলাইন কোর্সের ঘোষণা দেয়া হয়েছে BDLance E-English (নিচে লিংক)গ্রুপে। এছাড়াও…
থাক আর এছাড়াও না বলে বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
Comments
Post a Comment