আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ভাষা কাকে বলে?
08 March
2019 8:48am
-------------------------------------
সাধারণত ভাষার
দু’টি রূপ থাকে:
১. কথ্য রূপ
(spoken)
২. লেখ্য রূপ
(written)
এটা আমরা সবাই
জানি গ্রামার বইগুলোর কল্যাণে।
বলা বাহুল্য,
মানুষ যখন মুখ দিয়ে কথা বলে ভাষা প্রকাশ করে তখন তাকে বলে ভাষার কথ্য রূপ। আর যখন লিখে
মনের ভাব প্রকাশ করে তখন সেটাকে বলে ভাষার লেখ্য রূপ। এটাও আমরা সবাই জানি।
-
এছাড়াও ভাষার
ব্যবহারগত দিক থেকে আরো দু’টি রূপ আমরা শুনে থাকি। সাধারণত আমরা যখন Spoken
English (কথ্য ইংরেজি) শেখা শুরু করি তখন এই দু’টি রূপ এর কথা একটু জোরে শোরে শোনা
যেতে থাকে। যদিও স্কুল এর ইংরেজি পত্র শেখার সময়ই এই দু’টি রূপ দেখে থাকি। কিন্তু তখন
হয়ত আমরা সেটাকে খুব একটা আমলে নিই না। সে যাই হোক ঐ দু’টি রূপ হলো:
১. আনুষ্ঠানিক
ভাষা (formal language)
২. অনানুষ্ঠানিক
ভাষা (informal language)
-
সহজ উদাহরণ দিয়ে
শুরু করা যাক। আপনি আপনার স্কুলের শিক্ষকের কাছে ছুটির আবেদন জানিয়ে চিঠি, যাকে আমরা
Application বলে থাকি, লিখবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে Application লেখার নির্দিষ্ট
Format মেনে চলতে হবে। তারপর আপনার ভাষাও হতে হবে একটা আদর্শ অনুসারে। আমরা বাসায় বাবা-মা,
ভাই-বোন, বন্ধু দের সাথে যেভাবে কথা বলি, যে সব শব্দ চয়ন করি ঠিক একই ভাষায় ও শব্দে
কিন্তু শিক্ষকের সামনে কথা বলি না। শিক্ষকদের সামনে কথা বলতে হয় যথাযথ আদব-কায়দা বজায়
রেখে মেপে মেপে। ঠিক একই কারণে Application এও আমাদেরকে একটি আদর্শ বজায় রেখে শব্দ
ও ভাষা ব্যবহার করতে হয়। এই যে Application এ আমরা যে ভাষা ব্যবহার করছি বা করতে বাধ্য
হচ্ছি এটাকেই বলে আনুষ্ঠানিক ভাষা।
-
এবার ধরা যাক
আপনি আপনার আব্বুর কাছে চিঠি, যেটাকে আমরা letter বলে থাকি, লিখবেন। আব্বু অত্যন্ত
কাছের একজন মানুষ। ওনার সাথে অতটা আনুষ্ঠানিকতা বজার রাখার প্রয়োজন পড়ে না। এখানে আপনি
আপনার আবেগ ঢেলে দিতে পারবেন। মনের সমস্ত ভালোবাসা, আকুলতা জানাতে পারবেন। আবদার, অনুরোধ,
উপরোধ করতে পারবেন। বাসায় যে ভাষায় কথা বলেন ঠিক সে ভাষা-ই ব্যবহার করতে পারবেন। এখানে,
আপনি আপনার ইচ্ছেমত শব্দ ও বাক্য চয়ন করতে পারবেন। স্কুলের Application এর মত বাছা
বাছা শব্দ ডরে ডরে ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়বে না এখানে। এটা হলো অনানুষ্ঠানিক পরিবেশ।
অনানুষ্ঠানিক পরিবেশের ভাষাও হতে পারে অনানুষ্ঠানিক।
-
লক্ষ্যণীয় যে,
উপরের দুটি পরিবেশ এ আমরা ভাষার লেখ্যরূপ দেখেছি। আনুষ্ঠানিক পরিবেশে (শিক্ষকের সাথে)
আমরা আনুষ্ঠানিক ভাষায় লিখে মনের ভাব প্রকাশ করেছি। আর অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে (বাবার
সাথে) অনানুষ্ঠানিক ভাষায় লিখে মনের ভাব প্রকাশ করেছি।
-
আবার ধরুন, আপনার
বন্ধুকে বললেন, ‘দোস্ত, তোর শার্টটাতো ঝাক্কাস হইসে’। দোস্ত-র সাথে আপনি ‘ঝাক্কাস’
শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এখন আপনি আপনার শিক্ষককে যদি বলতে চান যে, তিনি খুব ভালো পড়ান।
তাহলে নিশ্চয়ই এটা বলবেন না যে, ‘স্যার, আপনি তো ঝাক্কাস পড়ান’। আপনাকে বলতে হবে,
‘স্যার, আপনি খুবই সুন্দর পড়ান। আমরা অনেক উপকৃত হই’। কারণ বন্ধু আর শিক্ষক এক নয়।
বন্ধুর সাথে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে অনানুষ্ঠানিক কথা বলা যায়; শিক্ষকের সাথে যায় না।
-
লক্ষ্য করুন,
এবার আমরা ভাষার কথ্যরূপ দিয়ে উদাহরণ দিয়েছি। আমরা বন্ধুর সাথে অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে
কথা বলেছি অনানুষ্ঠানিক ভাষায়। আর শিক্ষকের সাথে আনুষ্ঠানিক পরিবেশে আনুষ্ঠানিক ভাষায়।
-
আরেকটা উদাহরণ
দেয়া যা’ক। আপনি দুই বন্ধুর কথোপকথোন নিয়ে একটা ডায়ালগ রচনা করবেন পরীক্ষায় লিখার জন্য।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা নিয়ে দু’জন বন্ধু কথা বলছে বা বলা যেতে পারে
তর্কাতর্কি করছে। এই বন্ধুদ্বয় নিশ্চয়ই বইয়ের ভাষায় প্রাবন্ধিক এর মত কথা বলবে না।
বাস্তবে তারা যে ভাষায় কথা বলবে ঠিক সে ভাষায়ই আপনাকে ডায়ালগ লিখতে হবে। লক্ষ্য করুন,
এটা অনানুষ্ঠানিক পরিবেশ, পাত্র-পাত্রীরাও পরস্পরের খুবই কাছের। আপনার ডায়ালগের ভাষাও
হবে অনানুষ্ঠানিক এবং জীবন ঘনিষ্ঠ। যদিও আপনি লিখে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করছেন।
-
ঠিক একই ভাবে
যদি আপনি গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি লেখেন তবে পরিবেশ, পরিস্থিতি, পাত্র-পাত্রী ভেদে আনুষ্ঠানিক
ও অনানুষ্ঠানিক ভাষা প্রয়োগ করতে হবে।
-
আবার ধরেন, হালের
ফেইসবুকের পোস্টে মন্তব্য করবেন। বন্ধুর মজার কোনো পোস্টে যে ভাষায় মন্তব্য করতে পারবেন
ঠিক একই ভাষায় একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির কোনো গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে নিশ্চয়ই মন্তব্য করতে
পারবেন না। বন্ধুর পোস্টে ছিল অনানুষ্ঠানিক পরিবেশ। এখানে আপনি ‘সেইরকম’, ‘ঝাক্কাস’,
‘মাম্মা’ এসব অনানুষ্ঠানিক শব্দ ব্যবহার করতেই পারেন। কিন্তু এমন কোনো গণ্যমান্য ব্যক্তি
যাঁর সাথে আপনার বন্ধুত্বের সখ্যতা নেই তাঁর পোস্টে অবশ্যই আপনাকে ভদ্রতা বজায় রেখে
শব্দ ও বাক্য চয়ন করতে হবে। বলাবাহুল্য, এই ব্যক্তির পোস্টের পরিবেশ হলো আনুষ্ঠানিক।
-
এতক্ষণে নিশ্চয়
লক্ষ্য করে থাকবেন যে, আনুষ্ঠানিক ভাষা এবং অনানুষ্ঠানিক ভাষা ব্যবহার নির্ভর করে দু’টি
নেয়ামকের উপর:
১. পরিবেশ-পরিস্থিতি
২. পাত্র-পাত্রী
এই দু’টি নেয়ামকের
উপরই নির্ভর করে আপনি আনুষ্ঠানিক ভাষা ব্যবহার করবেন নাকি অনানুষ্ঠানিক ভাষা ব্যবহার
করবেন। সেটা আপনি লিখেও করতে পারেন, কিংবা মুখে বলেও করতে পারেন। লেখ্য রীতিতে যেমন
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ভাষা প্রয়োগ করা যায় তেমনি কথ্য রীতিতেও সেগুলো প্রয়োগ করা
যায়।
-
মোদ্দা কথা, আপনি
লিখে মনের ভাব প্রকাশ করছেন নাকি বলে মনের ভাব প্রকাশ করছেন সেটা বড় বিষয় নয়। বড় বিষয়
হলো, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও পাত্র-পাত্রী ভেদে আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আনুষ্ঠানিক নাকি
অনানুষ্ঠানিক ভাষা প্রয়োগ করবেন।
Comments
Post a Comment